বয়স তখন ৫ কি ৬, ভয়ঙ্কর কিছু স্মৃতি

বয়স তখন ৫ কি – বয়স তখন পাঁচ কি ছয় হবে। সে সময় প্রায় বাসায় আসতো দুইজন মামা। তখন আমরা সুইডেনে। আব্বা-আম্মা কাজের কারণে যখন বাইরে যেতো তখন আমাকে রেখে যেতো পাশের এক আন্টির বাসায়। আন্টির মেয়ের সঙ্গে আমি খেলতাম। হঠাৎ একদিন ওই দুই মামা এলো আন্টির বাসায়। আন্টির কি এক জরুরি কারণে বাইরে যাবেন। তাই আমাদের দু’জনকে নিরাপদ স্থান ভেবে ওই দুই নরপশুর কাছে রেখে যায় আন্টি। দুইজন আমাদেরকে কোলে নিয়ে যখন আদর করছিলো…আমি ভয় পাচ্ছিলাম। একটা আতঙ্ক, ভয় আর অস্বস্তিতে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা। বুঝলাম এরা দৈত্য।

এরপর তারা অনেকবার আমাদের বাসায় এসেছে। তাদেরকে দেখলেই দৌড় দিয়ে অন্য রুমে চলে যেতাম। আর চোখে পানি চলে আসতো তাদেরকে দেখলেই। ভয়ে কখনোই বলতে পারিনি আব্বা-আম্মাকে। কিসের ভয় সেটা এখনো জানি না। তবে, এখনো তাদেরকে দেখলে আমি চিনে ফেলবো।

ঘটনা ২: তখন আমি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি। কোন জানি একটা ব্যাংকে চাকরি করতো এমন একজন শিক্ষক আমাকে বাসায় পড়াতে আসতো মাগরিবের আগে-আগে। বাসায় এসে নামাজ পড়তো। নামাজে যাবার সময় আমাকে বলতো, মোনাজাতের সময় ডাকবো, এসো। গেলাম মোনাজাত করতে, সে জায়নামাজে বসে আমাকে কোলে নিয়ে মোনাজাত করতো আর আমি বুঝতাম কোনো শক্ত একটা কিছু আমার শরীরে আঘাত করছে। শরীরের মধ্যে অস্বস্তি আর ভয় লাগতো।

ওই অবস্থাতেই সেই নরপশু মোনাজাত শেষ করতো। এরপর আমি আমাদের বাসার খালাকে ( যে বাসায় কাজ করতো) বললাম, খালা.. স্যার যখন আমাকে ডাকে মোনাজাতের জন্য, তখন আমি যেতে চাই না, আর না গেলেও আব্বাকে বলবে আমি মোনাজাত করি না, পরে আব্বা বকবে আমাকে। আপনি কি দরজার ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবেন? খালা মনে হয় ব্যাপারটা বুঝেছিলো।

তার দু’একদিনের মধ্যেই আমার সামনে গিয়ে তাকে গালাগালি করে বাসা থেকে বের করে দেয়। অনেক শান্তি লেগেছিল তখন। কিন্তু, বলতে পারিনি আব্বা-আম্মাকে।

ঘটনা ৩: তখন আমি দশম শ্রেণির ছাত্রী। রায়ের বাজার স্কুলের একজন ইংরেজির শিক্ষক আমাকে বাসায় পড়াতে আসতো। পড়ানো রুমটা ছিলো বাসার সবচেয়ে কর্নারের। তার চোখ মুখের চাওনি ভালো লাগতো না। একদিন আব্বা-আম্মা একটা বিয়ের দাওয়াতে যাবে, যাবার সময় দেখা করে গেল আমার সঙ্গে। আমি তখন ওই নরপশুর কাছে পড়ছিলাম। সেদিনই হঠাৎ ওই নরপশুর আসল চেহারাটা দেখি। উঠে এসে প্রথমে বুকে হাত দেয়, তারপর জোর করে ঠোঁটে….।

শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে তাকে ধাক্কা দেই। আর জীবনের প্রথম প্রতিবাদ করি, জোরে গালে একটা চড় দেই। তারপর আমাকে পড়াতে আর কখনো আসেনি।

আম্মা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, কেন আসে না? আমি ভয়ে বলতে পারিনি। ভেবেছি, আম্মা যদি না বুঝে। আর আমাকে যদি খারাপ ভাবে। শুধু বলেছি, সে আর আসবে না… কারণ, সে বিদেশে চলে যাবে।

ঘটনা ৪: গাউছিয়া-চাঁদনী চকের মাঝে খুব ভিড় হতো। তখন আমি ডেন্টালে পড়ি। মার্কেটে গেছি আমার নানীর সঙ্গে। বার বার পেছন থেকে একটা হাত আমার বুকে আবার কখনো পেটে। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম, হাতটা ধরবো। ঠিকই হাতটা ধরলাম। শক্ত করে ধরে নখ বসিয়ে দিয়েছিলাম। তারপর ঘুরে তাকালাম। দেখলাম, সিটি কলেজের ব্যাচ পড়া এক ছাত্র। তখনো নখ ডাবিয়েই রেখেছিলাম হাতে। ততোক্ষণে লোকজনের ভিড়। সবাই হাত ছেড়ে দিতে বলল। তাকে শুধু একটা কথাই বলেছিলাম, এরপর থেকে কোনো মেয়ের শরীর ধরার আগে জিজ্ঞেস করে নিবি, শুয়োরের বাচ্চা।

ঘটনা ৫: তখন আমি এক বাচ্চার মা। পেটের ব্যাথা নিয়ে যাই ডাক্তারের কাছে। ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে সে আমার দুলাভাই হয়। বেটা তো ডাক্তার না, আসলে একটা…। stethoscope টা দিয়ে কোন কৌশলে Breast এ হাত দিতে হয় তা তার ভালোই জানা, বুঝলাম। এখানেও নিরাপদ না। আসার সময় তার মুখে থুথু মেরে এসেছিলাম। আর সেদিন সরাসরি যাই আব্বার কাছে। ঘটনাটা বলি। তারপর, একটা সময় সে মাফ চায়। কিন্তু, এদেরকে কখনো মাফ করতে নেই। তাই, মরলেও মাফ করবো না।

হয়তো এমন ঘটনা অনেকের জীবনেই আছে। আমরা শিশুকালে বলতে পারি না, পরে নিজেকে নিজে তৈরি করি, হই প্রতিবাদি। একটা সময় আব্বা-আম্মাকেও বলতে পারিনি। কারণ, প্রচন্ড ভয় পেতাম আর তাদেরকে বন্ধু মনে করতে পারিনি। আমারও মেয়ে আছে। আমি আমার মেয়ের সঙ্গে সব রকম গল্প করি। চাইনা ওর জীবনে এমন কিছু ঘটুক।

মেয়ে সন্তান একটু বড় হবার সঙ্গে সঙ্গেই মা হিসাবে উচিৎ, এসব নরপশুদের সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেয়া এবং নিশ্চিত করা, এটা তার (মেয়ের) দোষ না। আমাদের পৃথিবীতে এখনো এদের বসবাস আছে। তবে, এরা মুখোশ পড়া।

আজ এ ঘটনাগুলো লিখেছি সকলের নিরাপত্তার জন্য। জানি না আমাকে কে কি ভাবছেন। হয়তো কেউ-কেউ আমাকে নির্লজ্জ বলবেন। তবে, একটা কথাই বলব, নিরাপদ রাখুন আপনার শিশুকে। আর নারী তুমি রুখে দাঁড়াও।